আমাদের উদ্যোগ

যাকাত তহবিল ।।

হালাল রুজি উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ করো; আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে।’ (সূরা জুমুআ: আয়াত ১০)

নবী (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার নিজের হাতে অর্জিত খাবার থেকে উত্তম খাবার আর কখনও খায়নি।’ (সহীহ বুখারী, ২০৭২)

যাকাত হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা একটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। এটি বিত্তবানদের সম্পদ থেকে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের জন্য নির্দিষ্ট একটি অংশ, যা তাদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হয়। এটি ইসলামে একটি সামাজিক ন্যায়বিচারমূলক ব্যবস্থা।
  • অর্থ:
    যাকাত শব্দের অর্থ হলো “সন্তুষ্ট করা” বা “পরিষ্কার করা”। 
    • ফরয:

      যাকাত ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এবং সকল সক্ষম মুসলিমের জন্য এটি ফরজ।

        • নিসাব:

          যাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকতে হয়, যা “নিসাব” নামে পরিচিত। 

           
      • যাকাতযোগ্য সম্পদ:

        স্বর্ণ, রূপা, নগদ অর্থ, ব্যবসা এবং অন্যান্য সম্পদ যাকাতযোগ্য। 

         
      • যাকাতের হিসাব:

        যাকাতের হিসাব করার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, যা সাধারণত সম্পদের উপর নির্ভর করে। 

         
      • যাকাত বন্টন:
        যাকাত বিভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়, যেমন: দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি।
        যাকাত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা:
        • ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যাকাত দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কর্তব্য।
        • যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
        • যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সমাজে দারিদ্র্য দূর হয়।
        • যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদের অপব্যবহার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

কুরবানী

১. কুরবানীর মাংস বণ্টনের সাধারণ নিয়ম: ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, কুরবানীর মাংসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করার প্রচলন আছে, যদিও এটি আবশ্যিক নয় বরং মুস্তাহাব (পছন্দনীয়):

  • এক ভাগ: নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য।
  • এক ভাগ: আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য।
  • এক ভাগ: গরিব-মিসকিন ও অভাবীদের জন্য।

২. এতিমদের জন্য মাংসের অংশ: এতিমরা যেহেতু সাধারণত দরিদ্র ও অভাবী শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, তাই তাদের জন্য কুরবানীর মাংস দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রযোজ্য:

  • গরিব-মিসকিনের অংশে অগ্রাধিকার: কুরবানীর যে অংশটি গরিব-মিসকিনদের জন্য নির্ধারিত, সেখান থেকে এতিমদের দেওয়া যেতে পারে। এতিমখানা বা এতিমদের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা থাকলে তাদের মাধ্যমেও দেওয়া যায়।
  • পুরো মাংস দান করা: যদি কেউ তার কুরবানীর পুরো মাংসই দান করতে চান, তাহলে তিনি তা এতিমখানা বা এতিমদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ জায়েজ এবং সওয়াবের কাজ।
  • বিশেষ মনোযোগ: এতিমরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশের অন্তর্ভুক্ত, তাই তাদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতি ও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তাদের চাহিদা এবং সংখ্যা অনুযায়ী মাংস দেওয়া যেতে পারে।
  • রান্না করে খাওয়ানো: শুধুমাত্র কাঁচা মাংস না দিয়ে, যদি সম্ভব হয়, তাহলে এতিমদের জন্য মাংস রান্না করে পরিবেশন করাও খুবই সওয়াবের কাজ এবং এতে তাদের জন্য খাওয়ার সুবিধা হয়।

৩. এতিমখানা মাদ্রাসার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচ্য: আপনার মাদ্রাসায় যেহেতু এতিম, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, গরিব, মিসকিন, অসহায় বাচ্চারা লেখাপড়া করে এবং তারা বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া পায়, তাই কুরবানীর মাংস তাদের জন্য খুবই উপকারী হবে।

  • মাদ্রাসার ছাত্রদের হক: মাদ্রাসার এতিম ও দরিদ্র ছাত্ররা যেহেতু মৌলিকভাবে অভাবী, তাই তাদের জন্য কুরবানীর মাংস গ্রহণ করা জায়েজ।
  • ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিতরণ: কুরবানীর মাংস মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সংগ্রহ করে ছাত্রদের মধ্যে সমভাবে বন্টন করা যেতে পারে অথবা তাদের খাবারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • شفافতা (স্বচ্ছতা): যদি বাইরের কোনো দাতা আপনার মাদ্রাসায় এতিমদের জন্য কুরবানীর মাংস বা এর মূল্য দান করেন, তবে সেই অর্থ বা মাংস সঠিকভাবে এতিমদের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য স্বচ্ছতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্ষেপে: এতিমদের কুরবানীর মাংসের অংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে মূলত তাদেরকে গরিব-মিসকিন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয়। তাই কুরবানীর যে অংশটি অভাবীদের জন্য রাখা হয়, সেখান থেকে এতিমদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া উচিত। পুরো মাংস দান করলেও কোনো অসুবিধা নেই। এটি অত্যন্ত সওয়াবের কাজ এবং সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শনের একটি মাধ্যম।

বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি

দুঃখী ও অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের কষ্ট সহজ করে দেবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহও ততক্ষণ তাকে সাহায্য করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস-২৯৪৫)

এই প্রেক্ষাপটে, অভাবী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয় এবং উপরোক্ত হাদিসের ওপর আমল করে অন্যকে সহায়তা করা যায়।

প্রদত্ত সহায়তার মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আলু, কাপড়, মোমবাতি, দেশলাই, গ্যাস চুলা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মতো অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী।

এতিমদের লালন-পালন ও শিক্ষা প্রদান

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী  এতিমখানা মাদ্রাসা,এতিমদের যত্ন ও শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফাউন্ডেশন তাদের নিজেদের সন্তানের মতো করে এতিমদের সুস্বাস্থ্য এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে। পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষ থেকে, এতিমদের আশ্রয়, চিকিৎসা সেবা এবং সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।

এতিমদের যত্ন নেওয়া ইসলামে অত্যন্ত সওয়াবের কাজ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমি এবং যে ব্যক্তি এতিমের দেখাশোনা করবে ও তার ভরণপোষণ করবে, আমরা জান্নাতে এভাবে থাকব,’ এই বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করেন। (সুনান আবু দাউদ: হাদিস-৫১৫০)

সাদাকাহ জারিয়াহ।

সাদাকাহ জারিয়াহ মানে হলো: যে দানের উপকারিতা শুধু এককালীন নয়; বরং তা দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকে। যে দানের উপকারিতা একবারই অর্জিত হয়, সেগুলোর সওয়াবও শুধু একবারই পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে, যে দানের উপকারিতা দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত থাকে, সেগুলোর জন্য মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দীর্ঘকাল পর্যন্ত প্রতিদান অব্যাহত রাখেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি কাজ ছাড়া: ১. সাদাকাহ জারিয়াহ; ২. এমন জ্ঞান যা দ্বারা অন্যেরা উপকৃত হয়; ৩. একজন নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম: হাদিস-১৮৩১)

যে কাজ গুলো করা হবে।

সাদাকাহ জারিয়াহ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ, টিউবওয়েল খনন, ধর্মীয় বই বিতরণ এবং গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ।

এই প্রকল্পগুলোর যেকোনো একটির দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে নেওয়া যেতে পারে। আবার, যদি কেউ চান, তিনি সাদাকাহ জারিয়াহ খাতে যেকোনো পরিমাণ অর্থ দান করতে পারেন। সেই অর্থ কর্তৃপক্ষ তাদের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সাদাকাহ জারিয়াহর প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করবে।। ইনশাআল্লাহ

শীতবস্ত্র বিতরণ

ইসলামের অন্যতম শিক্ষা হলো মানবসেবা। প্রতি বছর প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায়, শীতার্ত মানুষের মাঝে উষ্ণতার পরশ পৌঁছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এতিমখানা মাদ্রাসা ‘শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি’র আয়োজন করে থাকে।

নবী (সা.) বলেছেন, ‘দয়াময় আল্লাহ দয়াকারীদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের অধিবাসীগণ তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (সুনান আবু দাউদ: হাদিস-৪৯৪১; সুনান তিরমিজি, হাদিস-১৯২৪

সাপ্তাহিক দরস

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এতিমখানা মাদ্রাসা, দাওয়াহ কর্মসূচির আওতায় ঈমান-আকিদা, কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, দীনী মাসালা-মাসায়েলসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সাপ্তাহিক দরসের আয়োজন করা হয়।

Scroll to Top